
টাইমস আই বেঙ্গলী ডটনেট, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিকশিত করায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।তিনি বলেন, আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিকশিত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। আমরা চাই অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) ‘একুশে পদক ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশে একেবারে তৃণমূলের যে মানুষগুলো, অবহেলিত মানুষগুলো রয়েছেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা চাই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে এবং আমাদের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি সেটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিকষিত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কাজেই সেই প্রচেষ্টাতেও আমরা সাফল্য অর্জন করবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
যারা আজকে সম্মাননা পেয়েছেন এবং যারা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের এই গুণীজনরাইতো পথ দেখাবে। আপনাদের এই অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বলেই আজকে আমাদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে সেটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ আমাদের প্রেরণা দেয়। একুশ মানে মাথা নোয়াবার নয়। তাই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একুশের পথ ধরে বহু সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। এই সংগ্রামে বিভিন্ন জন যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তারাতো বটেই, এর বাইরেও অনেকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিটি সংগ্রামে অবদান রয়েছে মানুষের।
তিনি বলেন, কেউ সরাসরি রাস্তায় নেমে আন্দোলন যেমন করেছেন ঠিক পাশাপাশি ভাষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে-গান, নাটিকা, কবিতার প্রভৃতির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের অবদান সবসময় চিরস্মরণীয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে ক’জন গুণীজন পুরস্কৃত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। কাজেই তাদের খুঁজে বের করা, সম্মানিত করা ওদেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও তাদের পরিচয় ঘটানো… যে কত ত্যাগ তিতীক্ষার মধ্যদিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন ছিল। কেন হঠাৎ ঘোষণার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা আসে না ও সেটা আসেনি। যে সংগ্রামের শুরুই করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতারই অবদান আজকে আমাদের স্বাধীন জাতিস্বত্তা ও বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছে। জাতির পিতা যখন দেশ স্বাধীন করে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ওপর আঘাত এল। মনে হলো ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের প্রতিশোধটাই নিয়েছিল পরাজিত শক্তি ৭৫ এর ১৫ আগস্টে। কেননা জাতির পিতাকে হত্যার পর যে আদর্শ বা নীতি নিয়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল তার থেকে দেশকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার তা আবার পুণঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন পুনরায় সরকারে আসি তখন আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয়, যারা মাতৃভাষা ভালোবাসে ও মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে সেই মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষাকে খুঁজে বের করাটাই তার সরকারের প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়।
সরকার সে প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। কাজেই আমাদের সবাইকে এদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে-কেননা যা কিছু আমাদের অর্জন, যা কিছুই আমরা করতে পেরেছি মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আমরা তা করতে পেরেছি।
‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার,’ জাতির পিতার এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। কাজেই মা’কে মা বলে ডাকার অধিকার অর্জন আমাদের জন্য একটা বিরাট পাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেটা আমি যেমন অনুরোধ করবো। পাশাপাশি, আমরা যে বিনা পয়সায় টিকাদান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি সেই সুবিধা নিয়ে সবাই করোনার টিকা গ্রহণ করবেন। যেটা অনেক অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম দেশও করতে পারেনি। আর এই টিকা আপনাকে সুরক্ষিত করবে।