
টাইমস আই বেঙ্গলী ডটনেট, ঢাকা: অল্প-সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে আইন পাস হওয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনা করলেও সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি ক্ষমতায় থাকা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাদেরমতে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ইসির আইন গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আইনে সন্তুষ্ট ও স্বস্তি ফিরেছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রপরিচালনাকারি দল আওয়ামী লীগে।
সরকারি দলটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার যে আইন পাস করেছে এটি দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো। ইসি গঠনের এই আইন নিয়ে যারা সমালোচনা করে, বিরোধিতা করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে, তারা দেশবিরোধী, জনগণবিরোধী, আইনবিরোধী, সংবিধানবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী। তারা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় ব্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে আইনটি পাস হওয়ার ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের দাবি মন্ত্রিসভায় এ আইন পাস করা হয় ১৭ জানুয়ারি ও জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয় ২৩ জানুয়ারি। মাত্র এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয় সংসদীয় কমিটিকে। এত অল্প সময়ে আইন পাস করার এখতিয়ার এ সংসদের নেই। এই আইন দ্বারা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সুবিধাভোগীরা অতিতে যেমন অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে নামকাওয়াস্তে কমিশন গঠন করে সুবিধাভোগ করেছে, নতুন আইনের মধ্য দিয়ে তারা সেই সুবিধা ভোগ করবে। এ আইন দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর সমালোচনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করছেন সরকারে থাকা দলের নেতারা। তাদের দাবি, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু কেউ নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করতে পারেনি। উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। দীর্ঘদিন পরে হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এ আইন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করছে। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণে যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সবগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই হয়েছে। ফলে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কমিশন গঠনে এই আইন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
সরকারি দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে কোনো নির্দিষ্ট আইন না থাকায় নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এখন একটি আইন গঠন করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে দিয়ে দেশের গণতন্ত্র আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের আইন-বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু এর সাথে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, কেউ কিন্তু নির্বাচন কমিশন আইন গঠনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। দীর্ঘদিন পরে হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার আইন করেছে। এটি কিন্তু আমাদের জন্য ভালো, দেশের রাজনীতির জন্য ভালো, দেশের গণতন্ত্রের জন্য ভালো। তিনি বলেন, আইন হয়েছে। আগামীতে যদি এই আইনের কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় তা কিন্তু করা সম্ভব। নতুন কিছু যুক্ত করতে চাইলেও কিন্তু করা সম্ভব। কাজেই এই আইন নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আইন হয়েছে, তাতেই আমরা খুশি। এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম এর সাথে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে এ আইন অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা করতে পারিনি। এ আইন গঠনে বর্তমান সরকার যে আইন করেছে— এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের এই আইন নিয়ে যারা সমালোচনা করে, বিরোধিতা করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে— এরা দেশবিরোধী, জনগণবিরোধী, আইনবিরোধী, সংবিধানবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী। এরা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় ব্যস্ত। এরা নীতি আদর্শহীন। তাদের বিরোধিতায় দেশের মানুষের কিছু যায় আসে না।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে করা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যে দল দেশের জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে,দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র করে, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যই প্রত্যাশিত ছিল। বিএনপি মহাসচিব এ আইনের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয় সংসদের সব সদস্য, দেশের সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি নির্মম উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, দেশের আইন ও সংবিধানের প্রতি বিএনপির কোনো বিশ্বাস নেই। তাই বিএনপি জনগণের ভোট নয়, বিদেশি প্রভুদের তুষ্ট করেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিইসি-ইসি নিয়োগ বিলটি আনা হয়। সংসদ সদস্যদের ভোটে বিলটি পাস হলে তা যায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। গত শনিবার এতে সই করেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্য দিয়ে এটি আইনে রূপ নেয়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সই করার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার বিলের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এই গেজেট রোববার উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হলো।