চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহীন বনে এবার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে ১৫টি গ্রেনেড ও ৫১০ রাউন্ড অটোমেটিক মেশিনের গুলি উদ্ধার করেছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অর্ধশত সদস্য সোমবার ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা সাতছড়ি টিকিট কাউন্টারের দক্ষিণ দিকে দেড় কিলোমিটার বনের ভিতরে অভিযান চালিয়ে এসব গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
সোমবার বিকাল ৪টায় চুনারুঘাট থানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান ব্রিফিংয়ে জানান, ঢাকা মহানগর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাউন্টার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের একটি দল রোববার রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অমিত ত্রিপুরা নামে একজনকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও ৪ রাউন্ডগুলিসহ আটক করে। তিনি তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় বলে জানায়। পরে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি বনে তার তত্ত্বাবধানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারুদ থাকার কথা স্বীকার করে।
তিনি জানান, পরে সিটিটিসি সদস্যরা রাতেই সাতছড়িতে অভিযানে নামে। তারা ভোর ৪টার দিকে আটক অমিতকে নিয়ে সাতছড়ি আসে। টিকিট কাউন্টারের গেট থেকে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর তিনি একটি পাহাড়ের টিলার নিচে অস্ত্র রয়েছে বলে শনাক্ত করেন। সেখানে সিটিটিসি সদস্যরা মাটি খুঁড়ে দুইটি বক্স উদ্ধার করেন। পরে আরও দুটি জায়গায় অস্ত্র রয়েছে বলে সেখানে সিটিটিসি সদস্যদের নিয়ে গেলে সেখানেও টিলার মাটি খুঁড়ে আরও ৪টি বক্স পাওয়া যায়। পরে অন্য একটি টিলার উপর শনাক্তমতে মাটি খুঁড়ে একটি বড় ড্রামে ভর্তি ১৫টি গ্রেনেড পাওয়া যায়। এছাড়া ৪টি বক্সে ৫১০ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। এগুলো অটোমেটিক মেশিনাগানের গুলি।
ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, উদ্ধারকৃত গোলাবারুদ সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে না। এগুলো সাধারণত সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
ডিআইজি আসাদুজ্জামান জানান, আটক অমিত ত্রিপুরাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার দখলে বা তার নলেজে আর কোনো গোলাবারুদ আছে কিনা তা আমরা জানার চেষ্ঠা করছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এসব অস্ত্র গোলাবারুদ অনেক দিন আগেই তিনি এ বনের অভ্যন্তরে রেখে গেছেন। তবে তিনি দিনক্ষণ বলে নাই। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
প্রেস ব্রিফিংকালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ছাড়া হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি ও চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলী আশরাফ ও পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক ধাম উপস্থিত ছিলেন।
সাতছড়ি বনে এর আগে ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, ছয়টি এসএলআর, একটি অটোরাইফেল, পাঁচটি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
এরপর আবারো ওই বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে চতুর্থ দফার প্রথম পর্যায়ে উদ্যানের গহীন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে তিনটি মেশিনগান, চারটি ব্যারেল, আটটি ম্যাগাজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আটটি বেল্ট ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়।
পরে একই বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজির আট হাজার ৩৬০ রাউন্ড, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়। পঞ্চম দফায় ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাতছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।
ষষ্ঠ দফায় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে ১৩ রকেট লঞ্চারের শেলসহ বেশ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। পরে সিলেট ক্যান্টনমেন্ট এর বোম ডিস্পোজল টিম এগুলো বনের ভেতরেই ধ্বংস করে ফেলে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩ মার্চ ১৮টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল বিজিবি সদস্যরা। পরে তা পাহাড়েই ধ্বংস করা হয়।
সূত্র: যুগান্তর অনলাইন।